Link to home pageLanguagesLink to all Bible versions on this site
5
যীশু মন্দ-আত্মাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করলেন
1 তারা গালীল সাগর আড়াআড়ি পার হয়ে গেরাসেনী অঞ্চলে পৌঁছালেন। 2 যীশু নৌকা থেকে নেমে এলে এক মন্দ-আত্মাগ্রস্ত ব্যক্তি কবরস্থান থেকে বের হয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এল। 3 এই মানুষটি কবরস্থানে বাস করত। কেউ তাকে আর বেঁধে রাখতে পারত না, এমনকি, শিকল দিয়েও নয়। 4 কারণ তার হাত পা প্রায়ই শিকল দিয়ে বাঁধা হত, কিন্তু সে ওই শিকল ছিঁড়ে ফেলত এবং পায়ের লোহার বেড়িও ভেঙে ফেলত। তাকে বশ করার মতো শক্তি কারও ছিল না। 5 সে দিনরাত কবরস্থানে ও পাহাড়ে পাহাড়ে চিৎকার করে বেড়াত এবং পাথর দিয়ে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করত।

6 সে দূর থেকে যীশুকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে তাঁর সামনে নতজানু হয়ে প্রণাম করল। 7 তারপর সে উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করে বলে উঠল, “হে পরাৎপর ঈশ্বরের পুত্র যীশু! আমাকে নিয়ে আপনি কী করতে চান? আমি আপনাকে ঈশ্বরের দিব্যি দিয়ে বলছি, আমাকে যন্ত্রণা দেবেন না।” 8 কারণ যীশু তাকে ইতিমধ্যে বলেছিলেন, “ওহে মন্দ-আত্মা, এই মানুষটির ভিতর থেকে বেরিয়ে এসো!”

9 তারপর যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কী?”

সে উত্তর দিল, “আমার নাম বাহিনী, কারণ আমাদের সংখ্যা অনেক।” 10 আর সে বারবার যীশুর কাছে অনুনয়-বিনয় করতে লাগল, যেন সেই এলাকা থেকে তিনি তাদের তাড়িয়ে না দেন।

11 অদূরে পাহাড়ের ঢালে বিশাল একপাল শূকর চরে বেড়াচ্ছিল। 12 ওই ভূতেরা যীশুর কাছে মিনতি করতে লাগল, “আমাদের ওই শূকরদের মধ্যে পাঠিয়ে দিন; ওদের ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি আমাদের দিন।” 13 তিনি তাদের যাওয়ার অনুমতি দিলেন। তখন মন্দ-আত্মারা বের হয়ে সেই শূকরদের মধ্যে প্রবেশ করল। পালে প্রায় দুই হাজার শূকর ছিল। সেই শূকরের পাল হ্রদের ঢালু পাড় বেয়ে ছুটে গেল এবং হ্রদে ডুবে মরল।

14 যারা ওই শূকরদের চরাচ্ছিল, তারা দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে নগরে ও গ্রামে-গঞ্জে এই বিষয়ের সংবাদ দিল। আর কী ঘটেছে, তা দেখার জন্য লোকেরা বেরিয়ে এল। 15 তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, যে ব্যক্তির উপরে ভূত বাহিনী ভর করেছিল, সে পোশাক পরে সুবোধ হয়ে সেখানে বসে আছে। তারা সবাই ভয় পেয়ে গেল। 16 প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই ভূতগ্রস্ত ব্যক্তিটির ও সেই শূকরপালের পরিণতির কথা সকলকে বলতে লাগল। 17 তখন সেই লোকেরা তাদের অঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য যীশুকে অনুরোধ করল।

18 যীশু নৌকায় উঠতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় সেই ব্যক্তি, যে ভূতগ্রস্ত ছিল, তাঁর সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল। 19 যীশু তাকে সেই অনুমতি দিলেন না, কিন্তু বললেন, “তুমি বাড়িতে তোমার পরিবারের কাছে যাও ও তাদের বলো, প্রভু তোমার জন্য যে যে মহান কাজ করেছেন এবং কেমন করে তিনি তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করেছেন।” 20 তখন সে চলে গেল এবং যীশু তার জন্য যা করেছেন, সেকথা ডেকাপলিতে প্রচার করতে লাগল। আর সব মানুষই এতে চমৎকৃত হল।

মৃত মেয়ে ও অসুস্থ নারী
21 যীশু যখন আবার নৌকায় উঠে আড়াআড়ি সাগরের অপর পারে গেলেন, সাগরের তীরে তখন তাঁর চারপাশে অনেক লোকের সমাবেশ হল। 22 সেই সময় যায়ীর নামে সমাজভবনের একজন অধ্যক্ষ সেখানে এলেন। যীশুকে দেখে তিনি তাঁর চরণে পতিত হলেন। 23 তিনি আকুলভাবে তাঁর কাছে অনুনয় করলেন, “আমার ছোটো মেয়েটি মরণাপন্ন। আপনি দয়া করে আসুন ও তার উপরে হাত রাখুন, যেন সে আরোগ্য লাভ করে বাঁচতে পারে।” 24 তাই যীশু তাঁর সঙ্গে চললেন।
অনেক লোক তাঁকে অনুসরণ করছিল ও তারা চারপাশ থেকে ঠেলাঠেলি করে তাঁর উপরে প্রায় চেপে পড়তে লাগল। 25 সেখানে এক নারী ছিল, যে বারো বছর ধরে রক্তস্রাবের ব্যাধিতে ভুগছিল। 26 বহু চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে সে অনেক কষ্টভোগ করেছিল। সে তার সর্বস্ব ব্যয় করেছিল, কিন্তু ভালো হওয়ার পরিবর্তে তার অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। 27 যীশুর কথা শুনে ভিড়ের মধ্যে সে পিছন দিকে এল এবং তাঁর পোশাক স্পর্শ করল। 28 কারণ সে ভেবেছিল, “আমি যদি কেবলমাত্র তাঁর পোশাকটি স্পর্শ করতে পারি, তাহলেই আমি সুস্থ হয়ে যাব।” 29 আর তক্ষুনি তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেল এবং সে শরীরে অনুভব করল যে, সে তার কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছে।

30 সেই মুহূর্তে যীশু উপলব্ধি করলেন যে, তাঁর মধ্য থেকে শক্তি নির্গত হয়েছে। তিনি পিছনে লোকদের দিকে ঘুরে বললেন, “কে আমার পোশাক স্পর্শ করেছে?”

31 তাঁর শিষ্যেরা উত্তর দিলেন, “আপনি দেখতে পাচ্ছেন, লোকেরা আপনার উপর চাপাচাপি করে পড়ছে, তবুও আপনি জিজ্ঞাসা করছেন, ‘কে আমাকে স্পর্শ করল’?”

32 কিন্তু যীশু চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন, কে এই কাজ করেছে। 33 তখন সেই নারী, তার প্রতি কী ঘটেছে জেনে, যীশুর কাছে এসে তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়ল। সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সমস্ত সত্য তাঁকে জানাল। 34 যীশু তাকে বললেন, “কন্যা, তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করেছে। শান্তিতে ফিরে যাও ও তোমার কষ্ট থেকে মুক্তি পাও।”

35 যীশু তখনও কথা বলছেন, এমন সময় সমাজভবনের অধ্যক্ষ যায়ীরের বাড়ি থেকে কয়েকজন লোক এসে উপস্থিত হল। তারা বলল, “আপনার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আর কেন গুরুমহাশয়কে বিব্রত করছেন?”

36 তাদের কথা অগ্রাহ্য করে যীশু সেই অধ্যক্ষকে বললেন, “ভয় পেয়ো না, শুধু বিশ্বাস করো।”

37 তিনি পিতর, যাকোব ও যাকোবের ভাই যোহন, এই তিনজন ছাড়া আর কাউকে তাঁর সঙ্গে যেতে দিলেন না। 38 তাঁরা সেই অধ্যক্ষের বাড়িতে এলে যীশু দেখলেন, সেখানে প্রচণ্ড হৈ হট্টগোল হচ্ছে, লোকেরা কাঁদছে ও তারস্বরে বিলাপ করছে। 39 তিনি ভিতরে প্রবেশ করে তাদের বললেন, “তোমরা এত হৈ হট্টগোল ও বিলাপ করছ কেন? মেয়েটি মরেনি, ও ঘুমিয়ে আছে।” 40 তারা কিন্তু তাঁকে উপহাস করল।

তাদের সবাইকে বের করে দিয়ে তিনি মেয়েটির বাবা-মা ও তাঁর সঙ্গী শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে মেয়েটি ভিতরে যেখানে ছিল, সেখানে গেলেন। 41 তিনি তার হাত ধরে তাকে বললেন, “টালিথা কওম্!” (এর অর্থ, “খুকুমণি, আমি তোমাকে বলছি, ওঠো”) 42 সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি উঠে দাঁড়াল ও চারদিকে ঘুরে বেড়াতে লাগল (তার বয়স ছিল বারো বছর)। এতে তারা সম্পূর্ণরূপে বিস্ময়-বিহ্বল হয়ে পড়ল। 43 তিনি তাদের দৃঢ় আদেশ দিলেন, কেউ যেন এ বিষয়ে জানতে না পারে। তারপর তিনি মেয়েটিকে কিছু খাবার খেতে দিতে বললেন।

<- মার্ক 4মার্ক 6 ->