3 যীশু যখন বেথানিতে কুষ্ঠরোগী শিমোন নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে আসনে হেলান দিয়ে বসেছিলেন, তখন একজন নারী, একটি শ্বেতস্ফটিকের পাত্রে বিশুদ্ধ জটামাংসীর নির্যাসে তৈরি বহুমূল্য সুগন্ধি তেল নিয়ে এল। সে পাত্রটি ভেঙে তাঁর মাথায় সেই সুগন্ধি তেল ঢেলে দিল।
4 উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ বিরক্তির স্বরে বলল, “সুগন্ধিদ্রব্যের এই অপচয় কেন? 5 এটি বিক্রি করে তো তিনশো দিনারেরও[a] বেশি অর্থ পাওয়া যেত ও দরিদ্রদের দান করা যেত।” তারা রূঢ়ভাবে তাকে তিরস্কার করল।
6 যীশু বললেন, “ওকে ছেড়ে দাও। তোমরা কেন ওকে উত্যক্ত করছ? ও আমার প্রতি এক অপূর্ব কাজ করেছে। 7 দরিদ্রদের তোমরা সবসময়ই সঙ্গে পাবে, আর তোমরা চাইলে যে কোনো সময় তাদের সাহায্য করতে পারো। কিন্তু আমাকে তোমরা সবসময় পাবে না। 8 সে তার সাধ্যমতোই কাজ করেছে। সে আগে থেকেই আমার শরীরে সুগন্ধিদ্রব্য ঢেলে দিয়ে আমার দেহকে সমাধির জন্য প্রস্তুত করেছে। 9 আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, সমস্ত জগতে, যেখানেই সুসমাচার প্রচারিত হবে, সে যা করেছে, স্মৃতির উদ্দেশে তার সেই কাজের কথাও বলা হবে।”
10 তখন সেই বারোজনের একজন, যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ যীশুকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধান যাজকদের কাছে গেল। 11 তারা একথা শুনে আনন্দিত হয়ে তাকে টাকা দিতে প্রতিশ্রুতি দিল। তাই সে তাঁকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে লাগল।
13 তাই তিনি তাঁর দুজন শিষ্যকে এই বলে পাঠালেন, “তোমরা ওই নগরে যাও। সেখানে দেখবে, এক ব্যক্তি জলের একটি কলশি নিয়ে যাচ্ছে। তোমরা তাকে অনুসরণ কোরো। 14 যে বাড়িতে সে প্রবেশ করবে, সেই গৃহকর্তাকে তোমরা বোলো, ‘গুরুমহাশয় জানতে চান, অতিথিদের জন্য আমার সেই নির্দিষ্ট ঘরটি কোথায়, যেখানে আমি আমার শিষ্যদের নিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ গ্রহণ করতে পারি?’ 15 সে তোমাদের উপরতলায় একটি বড়ো ঘর দেখাবে। তা সুসজ্জিত ও প্রস্তুত অবস্থায় আছে। আমাদের জন্য সেখানেই সব আয়োজন কোরো।”
16 সেই শিষ্যেরা বেরিয়ে পড়লেন। নগরে প্রবেশ করে যীশু তাঁদের যেমন বলেছিলেন, ঠিক তেমনই তাঁরা সবকিছু দেখতে পেলেন। তাই তাঁরা সেখানেই নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।
17 সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে, যীশু সেই বারোজনের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হলেন। 18 আসনে হেলান দিয়ে তাঁরা যখন আহার করছিলেন, তিনি বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে—সে আমারই সঙ্গে আহার করছে।”
19 তাঁরা দুঃখিত হলেন এবং এক এক করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সে নিশ্চয়ই আমি নই?”
20 তিনি উত্তর দিলেন, “সে এই বারোজনের মধ্যেই একজন, যে আমার সঙ্গে খাবারের পাত্রে রুটি ডুবালো। 21 মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে যে রকম লেখা আছে, তেমনই তিনি চলে যাবেন, কিন্তু ধিক্ সেই ব্যক্তিকে, যে মনুষ্যপুত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে! তার জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভালো হত।”
22 তাঁরা যখন আহার করছিলেন, যীশু রুটি নিলেন, ধন্যবাদ দিলেন ও তা ভাঙলেন। আর তিনি তাঁর শিষ্যদের দিলেন ও বললেন, “তোমরা নাও; এ আমার শরীর।”
23 তারপর তিনি পানপাত্রটি নিলেন, ধন্যবাদ দিলেন ও তাঁদের সেটি দিলেন। তাঁরা সবাই তা থেকে পান করলেন।
24 তিনি তাঁদের বললেন, “এ আমার রক্ত, নতুন নিয়মের[b] রক্ত, যা অনেকের জন্য পাতিত হয়েছে। 25 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ঈশ্বরের রাজ্যে আমি নতুন করে পান না করা পর্যন্ত দ্রাক্ষারস আর কখনও পান করব না।”
26 পরে তাঁরা একটি গান করে সেখান থেকে বের হয়ে জলপাই পর্বতে গেলেন।
29 পিতর তাঁকে বললেন, “সবাই আপনাকে ছেড়ে গেলেও, আমি যাব না।”
30 যীশু উত্তরে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজই—হ্যাঁ, আজ রাত্রিবেলায়—দু-বার মোরগ ডাকার আগেই, তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।”
31 কিন্তু পিতর আরও জোরের সঙ্গে বললেন, “আপনার সঙ্গে যদি আমাকে মৃত্যুবরণও করতে হয়, তাহলেও আমি আপনাকে কখনোই অস্বীকার করব না।” আর বাকি সকলেও একই কথা বললেন।
35 আরও কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে, তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রার্থনা করলেন, যেন সম্ভব হলে সেই লগ্ন তাঁর কাছ থেকে দূর করা হয়। 36 তিনি বললেন, “আব্বা,[d] পিতা, তোমার পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব। এই পানপাত্র আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও। তবুও আমার ইচ্ছা অনুযায়ী নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছা অনুযায়ী হোক।”
37 তারপর তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন, তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “শিমোন, তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ? তুমি এক ঘণ্টাও জেগে থাকতে পারলে না? 38 জেগে থাকো ও প্রার্থনা করো, যেন প্রলোভনে না পড়ো। আত্মা ইচ্ছুক, কিন্তু শরীর দুর্বল।”
39 আর একবার তিনি দূরে গিয়ে সেই একই প্রার্থনা করলেন। 40 যখন তিনি ফিরে এলেন, তিনি আবার তাঁদের ঘুমাতে দেখলেন, কারণ তাঁদের চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠেছিল। তাঁরা তাঁকে কী বলবেন, বুঝতে পারলেন না।
41 তৃতীয়বার তিনি ফিরে এসে তাঁদের বললেন, “তোমরা কি এখনও ঘুমিয়ে আছ ও বিশ্রাম করছ? যথেষ্ট হয়েছে! সময় হয়েছে। দেখো, মনুষ্যপুত্রকে পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 42 ওঠো! চলো আমরা যাই! দেখো, আমার বিশ্বাসঘাতক এসে পড়েছে।”
44 সেই বিশ্বাসঘাতক তাদের এই সংকেত দিয়ে রেখেছিল, “যাকে আমি চুম্বন করব, সেই ওই ব্যক্তি; তাকে গ্রেপ্তার কোরো ও সতর্ক পাহারা দিয়ে নিয়ে যেয়ো।” 45 সেই মুহূর্তেই যীশুর কাছে গিয়ে যিহূদা বলল, “রব্বি!” আর তাঁকে চুম্বন করল। 46 সেই লোকেরা যীশুকে ধরল ও তাঁকে গ্রেপ্তার করল। 47 যারা আশেপাশে দাঁড়িয়েছিল তাঁদের মধ্যে একজন তার তরোয়াল বের করে মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার একটি কান কেটে ফেলল।
48 যীশু বললেন, “আমি কি কোনও বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছি যে, তোমরা তরোয়াল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছ? 49 প্রতিদিন আমি তোমাদের সঙ্গে থেকে মন্দির চত্বরে বসে শিক্ষা দিয়েছি, তখন তো তোমরা আমাকে গ্রেপ্তার করোনি। কিন্তু শাস্ত্রবাণী অবশ্যই পূর্ণ হতে হবে।” 50 তখন সকলে তাঁকে ত্যাগ করে পালিয়ে গেলেন।
51 আর একজন যুবক, কোনো কিছু না-পরে, কেবলমাত্র একটি মসিনার কাপড় গায়ে জড়িয়ে যীশুকে অনুসরণ করছিল। 52 তারা তাকে ধরলে, সে তার পোশাক ফেলে নগ্ন অবস্থাতেই পালিয়ে গেল।
55 প্রধান যাজকেরা ও সমস্ত মহাসভা যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজছিল, কিন্তু তারা সেরকম কিছুই পেল না। 56 অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিল ঠিকই, কিন্তু তাদের সাক্ষ্যের মধ্যে কোনও মিল ছিল না।
57 তখন কয়েকজন উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এই মিথ্যা সাক্ষ্য দিল: 58 “আমরা একে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের তৈরি এই মন্দির আমি ধ্বংস করতে ও তিনদিনের মধ্যে আর একটি মন্দির নির্মাণ করতে পারি, যা মানুষের তৈরি নয়।’ ” 59 তবুও, এই সাক্ষ্যের মধ্যেও কোনো মিল খুঁজে পাওয়া গেল না।
60 তখন মহাযাজক তাদের সামনে উঠে দাঁড়ালেন ও যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি উত্তর দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এরা যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ এনেছে, সেগুলি কী?” 61 যীশু তবুও নীরব রইলেন, কোনও উত্তর দিলেন না।
62 যীশু বললেন, “আমিই তিনি। আর তোমরা মনুষ্যপুত্রকে সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডানদিকে বসে থাকতে ও স্বর্গের মেঘে করে আসতে দেখবে।”
63 তখন মহাযাজক তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন। তিনি বললেন, “আমাদের আর সাক্ষ্য-প্রমাণের কী প্রয়োজন? 64 তোমরা তো ঈশ্বরনিন্দা শুনলে। তোমাদের অভিমত কী?”
68 কিন্তু তিনি সেই কথা অস্বীকার করলেন। তিনি বললেন, “তুমি কী বলছ, তা আমি জানি না, বুঝতেও পারছি না।” এরপর তিনি প্রবেশদ্বারের দিকে চলে গেলেন, আর তক্ষুনি মোরগ ডেকে উঠল।
69 সেই দাসী তাঁকে সেখানে দেখে তাঁর চারপাশের লোকদের আবার বলল, “এই লোকটিও ওদেরই একজন!” 70 তিনি আবার তা অস্বীকার করলেন।
71 তিনি নিজেকে অভিশাপ দিতে লাগলেন ও তাদের কাছে শপথ করে বললেন, “যাঁর সম্পর্কে আপনারা বলছেন, তাঁকে আমি চিনি না।”
72 সঙ্গে সঙ্গে মোরগ দ্বিতীয়বার ডেকে উঠল। তখন যীশু পিতরকে যে কথা বলেছিলেন, তাঁর তা মনে পড়ল: “মোরগ দু-বার ডাকার পূর্বে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে।” তখন তিনি অত্যন্ত কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
<- মার্ক 13মার্ক 15 ->