4 একথা শুনে যীশু বললেন, “এই অসুস্থতা মৃত্যুর জন্য হয়নি, কিন্তু ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশের জন্য এরকম হয়েছে, যেন ঈশ্বরের পুত্র এর মাধ্যমে গৌরবান্বিত হন।” 5 মার্থা, তাঁর বোন ও লাসারকে যীশু প্রেম করতেন। 6 তবুও লাসারের অসুস্থতার কথা শুনে তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানেই আরও দু-দিন রইলেন। 7 এরপর তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, “চলো, আমরা যিহূদিয়ায় ফিরে যাই।”
8 তাঁর শিষ্যেরা বললেন, “কিন্তু রব্বি, কিছু সময় আগেই তো ইহুদিরা আপনাকে পাথর মারার চেষ্টা করেছিল, তবুও আপনি সেখানে ফিরে যেতে চাইছেন?”
9 যীশু উত্তর দিলেন, “দিনের আলোর স্থায়িত্ব কি বারো ঘণ্টা নয়? যে মানুষ দিনের আলোয় পথ চলে, সে হোঁচট খাবে না। কারণ এই জগতের আলোতেই সে দেখতে পায়। 10 কিন্তু রাতে যখন সে পথ চলে, তখন সে হোঁচট খায়, কারণ তার কাছে আলো থাকে না।”
11 একথা বলার পর তিনি তাঁদের বললেন, “আমাদের বন্ধু লাসার ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু তাকে জাগিয়ে তুলতে আমি সেখানে যাচ্ছি।”
12 তাঁর শিষ্যেরা বললেন, “প্রভু, সে যদি ঘুমিয়ে পড়েছে, তাহলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।” 13 যীশু তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বলছিলেন, কিন্তু তাঁর শিষ্যেরা ভাবলেন, তিনি স্বাভাবিক ঘুমের কথা বলছেন।
14 তাই তিনি তাঁদের স্পষ্টভাবে বললেন, “লাসারের মৃত্যু হয়েছে। 15 তোমাদের কথা ভেবে আমি আনন্দিত যে, আমি তখন সেখানে ছিলাম না, যেন তোমরা বিশ্বাস করতে পারো। চলো, আমরা তার কাছে যাই।”
16 তখন থোমা, যিনি দিদুমঃ (যমজ) নামে আখ্যাত, অন্যান্য শিষ্যদের বললেন, “চলো, আমরাও যাই, যেন তাঁর সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে পারি।”
21 মার্থা যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি এখানে উপস্থিত থাকলে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হত না। 22 কিন্তু আমি জানি, আপনি ঈশ্বরের কাছে যা চাইবেন, তিনি আপনাকে এখনও তাই দেবেন।”
23 যীশু তাঁকে বললেন, “তোমার ভাই আবার জীবিত হবে।”
24 মার্থা উত্তর দিলেন, “আমি জানি, শেষের দিনে, পুনরুত্থানের সময়, সে আবার জীবিত হবে।”
25 যীশু তাঁকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমাকে বিশ্বাস করে, তার মৃত্যু হলেও সে জীবিত থাকবে। 26 আর যে জীবিত এবং আমাকে বিশ্বাস করে, তার মৃত্যু কখনও হবে না। তুমি কি একথা বিশ্বাস করো?”
27 তিনি তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ প্রভু, আমি বিশ্বাস করি যে, জগতে যাঁর আগমনের সময় হয়েছিল, আপনিই সেই মশীহ, ঈশ্বরের পুত্র।”
28 একথা বলে তিনি ফিরে গিয়ে তাঁর বোন মরিয়মকে একান্তে ডেকে বললেন, “গুরুমহাশয় এখানে এসেছেন, তিনি তোমাকে ডাকছেন।” 29 একথা শুনে মরিয়ম তাড়াতাড়ি উঠে তাঁর কাছে গেলেন। 30 যীশু তখনও গ্রামে প্রবেশ করেননি, মার্থার সঙ্গে তাঁর যেখানে দেখা হয়েছিল, তিনি তখনও সেখানেই ছিলেন। 31 যে ইহুদিরা মরিয়মকে তাঁর বাড়িতে এসে সান্ত্বনা দিচ্ছিল, তাঁকে তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে যেতে দেখে তারা মনে করল, তিনি বোধহয় সমাধিস্থানে দুঃখে কাঁদতে যাচ্ছেন। তাই তারা তাকে অনুসরণ করল।
32 যীশু যেখানে ছিলেন, মরিয়ম সেখানে পৌঁছে তাঁকে দেখতে পেলেন। তিনি তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়ে বললেন, “প্রভু, আপনি এখানে উপস্থিত থাকলে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হত না।”
33 মরিয়মকে এবং তাঁর অনুসরণকারী ইহুদিদের কাঁদতে দেখে, যীশু আত্মায় গভীরভাবে বিচলিত ও উদ্বিগ্ন হলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, 34 “তোমরা তাকে কোথায় রেখেছ?”
35 যীশু কাঁদলেন।
36 তখন ইহুদিরা বলল, “দেখো, তিনি তাঁকে কত ভালোবাসতেন!”
37 কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন বলল, “যিনি সেই অন্ধ ব্যক্তির চোখ খুলে দিয়েছিলেন, তিনি কি সেই ব্যক্তিকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারতেন না?”
40 যীশু তখন বললেন, “আমি কি তোমাকে বলিনি যে, যদি তুমি বিশ্বাস করো, তাহলে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পাবে?”
41 তারা তখন পাথরটি সরিয়ে দিল। যীশু তারপর আকাশের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, “পিতা, আমার প্রার্থনা শুনেছ বলে তোমায় ধন্যবাদ দিই। 42 আমি জানতাম, তুমি নিয়ত আমার কথা শোনো, কিন্তু এখানে যারা দাঁড়িয়ে আছে, তাদের উপকারের জন্য একথা বলছি। তারা যেন বিশ্বাস করে যে তুমি আমাকে পাঠিয়েছ,”
43 একথা বলে যীশু উচ্চকণ্ঠে ডাক দিলেন, “লাসার, বেরিয়ে এসো!” 44 সেই মৃত ব্যক্তি বেরিয়ে এলেন। তাঁর হাত ও পা লিনেন কাপড়ের ফালিতে জড়ানো ছিল, তার মুখ ছিল কাপড়ে ঢাকা।
49 তখন তাদের মধ্যে কায়াফা নামে এক ব্যক্তি, যিনি সে বছরের মহাযাজক ছিলেন, বললেন, “তোমরা কিছুই জানো না, 50 তোমরা বুঝতে পারছ না যে, সমগ্র জাতি বিনষ্ট হওয়ার চেয়ে বরং প্রজাদের মধ্যে একজন মানুষের মৃত্যু শ্রেয়।”
51 তিনি নিজের থেকে একথা বলেননি, কিন্তু সেই বছরের মহাযাজকরূপে ভবিষ্যদ্বাণী করলেন যে, ইহুদি জাতির জন্য যীশু মৃত্যুবরণ করবেন 52 এবং শুধুমাত্র সেই জাতির জন্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের যেসব সন্তান ছিন্নভিন্ন হয়েছিল, তাদের সংগ্রহ করে এক করার জন্যও তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। 53 তাই সেদিন থেকে তারা যীশুকে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্র করতে লাগল।
54 সেই কারণে যীশু এরপর ইহুদিদের মধ্যে আর প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেন না। পরিবর্তে, তিনি মরু-অঞ্চলের নিকটবর্তী ইফ্রয়িম নামক এক গ্রামে চলে গেলেন। সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে থাকলেন।
55 ইহুদিদের নিস্তারপর্বের সময় প্রায় এসে গেল; নিস্তারপর্বের আগে আনুষ্ঠানিক শুদ্ধকরণের জন্য বহু লোক গ্রামাঞ্চল থেকে জেরুশালেমে গেল। 56 তারা যীশুর সন্ধান করতে লাগল এবং মন্দির চত্বরে দাঁড়িয়ে পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, “তোমাদের কী মনে হয়, তিনি কি পর্বে আসবেন না?” 57 কিন্তু প্রধান যাজকবর্গ ও ফরিশীরা আদেশ জারি করেছিল যে, কেউ যদি কোথাও যীশুর সন্ধান পায়, তাহলে যেন সেই সংবাদ জানায়, যেন তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
<- যোহন 10যোহন 12 ->