5 সেই দাস তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সেই মেয়েটি যদি এই দেশে আসতে অনিচ্ছুক হয় তবে কী হবে? তবে কি যে দেশ থেকে আপনি এসেছেন, সেই দেশে আমি আপনার ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব?”
6 “তুমি কোনোমতেই আমার ছেলেকে সেই দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না,” অব্রাহাম বললেন। 7 “স্বর্গের সেই ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি আমাকে আমার পিতৃগৃহ থেকে ও আমার মাতৃভূমি থেকে বের করে এনেছেন এবং আমার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এক শপথের মাধ্যমে প্রতিজ্ঞা করে বলেছেন, ‘এই স্থানটি আমি তোমার সন্তানসন্ততিকে*অথবা, “বংশকে” দেব,’ তিনিই তোমার অগ্রগামী করে তাঁর দূতকে পাঠিয়ে দেবেন, যেন তুমি সেখান থেকে আমার ছেলের জন্য এক স্ত্রী আনতে পারো। 8 যদি সেই মেয়েটি তোমার সঙ্গে আসতে না চায়, তবে তুমি আমার এই শপথ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। শুধু তুমি আমার ছেলেকে সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যেয়ো না।” 9 অতএব সেই দাস তাঁর প্রভু অব্রাহামের ঊরুর তলায় হাত রেখে এই বিষয়ে তাঁর কাছে শপথ করলেন।
10 পরে সেই দাস তাঁর প্রভুর উটগুলির মধ্যে থেকে দশটি উটের পিঠে তাঁর প্রভুর কাছ থেকে পাওয়া সব ধরনের ভালো ভালো জিনিসপত্র চাপিয়ে নিয়ে রওনা হয়ে গেলেন। তিনি অরাম-নহরয়িমের†অর্থাৎ, উত্তর-পশ্চিম মেসোপটেমিয়া উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন এবং নাহোরের নগরে পৌঁছালেন। 11 তিনি নগরের বাইরে অবস্থিত একটি কুয়োর কাছে উটগুলিকে নতজানু করে বসালেন; তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল, যে সময় মহিলারা কুয়ো থেকে জল তুলতে যায়।
12 তখন তিনি প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, আমার প্রভু অব্রাহামের ঈশ্বর, আজ তুমি আমাকে সফল করে তোলো, এবং আমার প্রভু অব্রাহামের প্রতি দয়া দেখাও। 13 দেখো, আমি এই জলের উৎসের ধারে দাঁড়িয়ে আছি, এবং নগরবাসীদের মেয়েরা জল তুলতে আসছে। 14 এরকমই হোক যেন আমি যখন একটি যুবতী মেয়েকে বলব, ‘দয়া করে তোমার কলশিটি নামিয়ে রাখো যেন আমি জলপান করতে পারি,’ এবং সে যখন বলবে, ‘আপনি পান করুন এবং আপনার উটগুলির জন্যও আমি পানীয় জল দেব, ’ তখন সেই যেন সেই মেয়ে হয়, যাকে তুমি তোমার দাস ইস্হাকের জন্য মনোনীত করেছ। এর দ্বারাই আমি জানতে পারব যে তুমি আমার প্রভুর প্রতি দয়া দেখিয়েছ।”
15 ঈশ্বরের কাছে করা তাঁর প্রার্থনাটি শেষ হওয়ার আগেই রিবিকা তার কলশি কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। তিনি অব্রাহামের ভাই নাহোরের স্ত্রী মিল্কার ছেলে বথূয়েলের মেয়ে। 16 সেই মেয়েটি অপরূপ সুন্দরী, ও এক কুমারী ছিলেন; কোনও পুরুষ কখনও তাঁর সাথে শোয়নি। তিনি জলের উৎসের কাছে নেমে গিয়ে, তাঁর কলশিতে জল ভরে আবার উপরে উঠে আসছিলেন।
17 সেই দাস তাড়াতাড়ি তাঁর সাথে দেখা করে বললেন, “দয়া করে তোমার কলশি থেকে আমায় একটু জল দাও।”
18 “হে আমার প্রভু, পান করুন,” এই বলে রিবিকা চট্ করে কলশিটি হাতে নামিয়ে এনে তাঁকে পানীয় জল দিলেন।
19 তাঁকে পানীয় জল দেওয়ার পর রিবিকা বললেন, “আমি আপনার উটগুলির জন্যও ততক্ষণ জল তুলতে থাকব, যতক্ষণ না তারা যথেষ্ট পরিমাণ জলপান করে ফেলছে।” 20 অতএব তিনি তাড়াতাড়ি সেই জাবপাত্রে কলশির জল খালি করে দিলেন, আরও জল তোলার জন্য কুয়োর কাছে দৌড়ে ফিরে গেলেন, এবং সেই দাসের সব উটের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জল তুলে আনলেন। 21 কোনও কথা না বলে সেই লোকটি এই বিষয়টি বোঝার জন্য তাঁকে খুব ভালো করে লক্ষ্য করছিলেন, যে সদাপ্রভু তাঁর যাত্রা আদৌ সফল করেছেন কি না।
22 উটগুলি জলপান করে ফেলার পর, সেই লোকটি এক বেকা‡অর্থাৎ, প্রায় 5.7 গ্রাম ওজনের একটি সোনার নথ এবং দশ শেকল§অর্থাৎ, প্রায় 115 গ্রাম ওজনের সোনার দুটি বালা বের করলেন। 23 পরে তিনি প্রশ্ন করলেন, “তুমি কার মেয়ে? দয়া করে আমায় বলো তো, তোমার পিতৃগৃহে আমাদের রাত কাটানোর জন্য ঘর আছে কি?”
24 রিবিকা তাঁকে উত্তর দিলেন, “আমি সেই বথূয়েলের মেয়ে, যিনি নাহোরের ছেলে, ও যাঁকে মিল্কা নাহোরের জন্য জন্ম দিয়েছিলেন।” 25 তিনি আরও বললেন, “আমাদের কাছে প্রচুর খড়-বিচালি ও জাব*অথবা, গবাদি পশুর শুকনো খাদ্য আছে, তা ছাড়া আপনাদের রাত কাটানোর জন্য ঘরও আছে।”
26 তখন সেই লোকটি মাথা নত করে সদাপ্রভুর আরাধনা করলেন, 27 এবং বললেন, “আমার প্রভু অব্রাহামের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক, যিনি আমার প্রভুর প্রতি তাঁর দয়া ও বিশ্বস্ততা দেখাতে ক্ষান্ত হননি। আমার ক্ষেত্রেও, সদাপ্রভু আমার প্রভুর আত্মীয়স্বজনের বাড়ি পর্যন্ত যাত্রাপথে আমাকে পথ দেখালেন।”
28 যুবতী মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে তাঁর মায়ের পরিজনদের এইসব বিষয় জানালেন। 29 রিবিকার এক দাদা ছিলেন, যাঁর নাম লাবন, আর তিনি চট্ করে জলের উৎসের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির কাছে চলে গেলেন। 30 সেই নথটি এবং তাঁর বোনের হাতের বালা দেখামাত্রই এবং রিবিকাকে সেই লোকটি যা যা বলেছিলেন, সেসব কথা তাঁর কাছ থেকে শোনামাত্রই তিনি সেই লোকটির কাছে চলে গেলেন এবং দেখতে পেলেন, তিনি সেই জলের উৎসের কাছে উটগুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। 31 “হে সদাপ্রভুর আশীর্বাদধন্য ব্যক্তি, আসুন,” তিনি বললেন। “আপনি এখানে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমি আপনার জন্য বাড়িঘর ঠিকঠাক করে রেখেছি এবং উটগুলির জন্যও জায়গা করে রেখেছি।”
32 অতএব সেই লোকটি বাড়িতে গেলেন এবং উটগুলিকেও ভারমুক্ত করা হল। উটগুলির জন্য খড়-বিচালি ও জাব আনা হল এবং তাঁর ও তাঁর লোকজনের পা ধোয়ার জন্য জল আনা হল। 33 পরে তাঁর সামনে খাবার পরিবেশন করা হল, কিন্তু তিনি বললেন, “আমার যা বলার আছে তা যতক্ষণ না আমি আপনাদের বলে শুনাচ্ছি, ততক্ষণ আমি কিছু খাব না।”
34 অতএব তিনি বললেন, “আমি অব্রাহামের দাস। 35 সদাপ্রভু আমার প্রভুকে প্রচুর পরিমাণে আশীর্বাদ করেছেন, এবং তিনি ধনী হয়ে গিয়েছেন। সদাপ্রভু তাঁকে মেষ ও গবাদি পশুপাল, রুপো ও সোনা, দাস ও দাসী, এবং উট ও গাধা দিয়েছেন। 36 আমার প্রভুর স্ত্রী সারা বৃদ্ধাবস্থায় তাঁর জন্য এক ছেলের জন্ম দিয়েছেন, এবং আমার প্রভুর নিজস্ব সবকিছু তিনি তাঁকেই দিয়েছেন। 37 আর আমার প্রভু আমাকে দিয়ে এক শপথ করিয়ে নিয়েছেন, ও বলেছেন, ‘যাদের দেশে আমরা বসবাস করছি, সেই কনানীয়দের মেয়েদের মধ্যে থেকে কাউকে তুমি আমার ছেলের স্ত্রী করে আনবে না, 38 কিন্তু তুমি আমার পিতৃপরিজনদের এবং আমার নিজের গোত্রভুক্ত লোকজনের কাছে যাবে, ও আমার ছেলের জন্য এক স্ত্রী নিয়ে আসবে।’
39 “তখন আমি আমার প্রভুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘সেই মেয়েটি যদি আমার সঙ্গে আসতে না চায় তবে কী হবে?’
40 “তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘যাঁর সাক্ষাতে আমি বিশ্বস্ততাপূর্বক চলেছি, সেই সদাপ্রভুই তাঁর দূতকে তোমার সঙ্গে পাঠাবেন এবং তোমার যাত্রা সফল করবেন, যেন তুমি আমার নিজের গোত্রভুক্ত লোকজনের ও আমার পিতৃপরিজনদের মধ্য থেকেই আমার ছেলের জন্য এক স্ত্রী আনতে পারো। 41 আমার শপথ থেকে তুমি মুক্ত হয়ে যাবে যদি, তুমি যখন আমার গোত্রভুক্ত লোকজনের কাছে যাবে, ও তারা যদি মেয়েটিকে তোমার হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে—তখন তুমি আমার শপথ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।’
42 “আজ যখন আমি জলের উৎসের কাছে এলাম, তখন আমি বললাম, ‘হে সদাপ্রভু, আমার প্রভু অব্রাহামের ঈশ্বর, যদি তোমার ইচ্ছা হয়, তবে দয়া করে তুমি আমার এই যাত্রা সফল করো, যে যাত্রায় আমি বের হয়ে এসেছি। 43 দেখো, আমি এই জলের উৎসের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। একটি যুবতী মেয়ে যদি এখানে জল তুলতে আসে এবং আমি যদি তাকে বলি, “দয়া করে তোমার কলশি থেকে আমাকে একটু জলপান করতে দাও,” 44 আর সে যদি আমাকে বলে, “পান করুন, এবং আমি আপনার উটগুলির জন্যও জল তুলে দেব,” তবে সেই যেন এমন একজন হয়, যাকে সদাপ্রভু আমার প্রভুর ছেলের জন্য মনোনীত করে রেখেছেন।’
45 “মনে মনে আমি এই প্রার্থনা শেষ করার আগেই, রিবিকা বেরিয়ে এল, ও তার কাঁধে কলশি ছিল। সে জলের উৎসের কাছে নেমে গেল ও জল তুলছিল, আর আমি তাকে বললাম, ‘দয়া করে আমাকে পান করার জল দাও।’
46 “সে তাড়াতাড়ি কাঁধ থেকে তার কলশিটি নামিয়ে এনে বলল, ‘পান করুন, এবং আমি আপনার উটগুলির জন্যও জল দেব।’ অতএব আমি জলপান করলাম, এবং সে উটগুলিকেও জল দিল।
47 “আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি কার মেয়ে?’
50 লাবন ও বথূয়েল উত্তর দিলেন, “সদাপ্রভুর দিক থেকেই এই ঘটনাটি ঘটেছে; এই ব্যাপারে আমরা আপনাকে ভালোমন্দ কিছুই বলতে পারব না। 51 রিবিকা এখানেই আছে; তাকে নিয়ে চলে যান, আর সে আপনার প্রভুর ছেলের স্ত্রী হয়ে যাক, যেমনটি সদাপ্রভু নির্দেশ দিয়েছেন।”
52 তাঁরা যা বললেন, অব্রাহামের দাস যখন তা শুনলেন, তখন তিনি সদাপ্রভুর সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন। 53 পরে সেই দাস সোনা ও রুপোর গয়না এবং বিভিন্ন ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ বের করে সেগুলি রিবিকাকে দিলেন; তিনি তাঁর দাদা ও মাকেও মূল্যবান উপহারসামগ্রী দিলেন। 54 পরে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন ভোজনপান করলেন এবং সেখানেই রাত কাটালেন।
55 কিন্তু রিবিকার দাদা ও মা উত্তর দিলেন, “মেয়েটি আমাদের কাছে দিন দশেক থাকুক; পরে আপনারা যেতে পারেন।”†অথবা, “সে যেতে পারে”
56 কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, “আমাকে আটকে রাখবেন না, যেহেতু সদাপ্রভু আমার যাত্রা সফল করেছেন। আমাকে বিদায় দিন, যেন আমি আমার প্রভুর কাছে যেতে পারি।”
57 তখন তাঁরা বললেন, “মেয়েটিকে ডাকা হোক এবং তাকেই এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা যাক।” 58 অতএব তাঁরা রিবিকাকে ডেকে এনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি এই লোকটির সঙ্গে যাবে?”
59 অতএব তাঁরা তাঁদের বোন রিবিকাকে ও তাঁর ধাত্রীকে এবং অব্রাহামের দাস ও তাঁর লোকজনকে বিদায় জানালেন। 60 আর তাঁরা রিবিকাকে আশীর্বাদ করে তাঁকে বললেন,
61 পরে রিবিকা ও তাঁর সেবিকারা প্রস্তুত হয়ে উটের পিঠে চড়ে সেই লোকটির সাথে চলে গেলেন। অতএব সেই দাস রিবিকাকে সাথে নিয়ে প্রস্থান করলেন।
62 এদিকে ইস্হাক বের-লহয়-রোয়ী থেকে ফিরে আসছিলেন, কারণ তিনি তখন নেগেভে বসবাস করতেন। 63 এক সন্ধ্যায় তিনি ধ্যান করতে ক্ষেতে গেলেন, এবং যেই তিনি উপর দিকে তাকালেন, তিনি দেখতে পেলেন কয়েকটি উট এগিয়ে আসছে। 64 রিবিকাও উপর দিকে তাকালেন এবং ইস্হাককে দেখতে পেলেন। তিনি তাঁর উটের পিঠ থেকে নেমে 65 সেই দাসকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ক্ষেত থেকে যিনি আমাদের সাথে দেখা করতে এগিয়ে আসছেন, তিনি কে?”
66 পরে সেই দাস নিজে যা যা করেছিলেন সেসব তিনি ইস্হাককে বলে শোনালেন। 67 ইস্হাক রিবিকাকে তাঁর মা সারার তাঁবুতে নিয়ে এলেন, এবং তাঁকে বিয়ে করলেন। অতএব রিবিকা তাঁর স্ত্রী হয়ে গেলেন, এবং ইস্হাক তাঁকে ভালোবাসলেন; আর ইস্হাক তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর সান্ত্বনা লাভ করলেন।
<- আদি পুস্তক 23আদি পুস্তক 25 ->