আদিপুস্তক গ্রন্থস্বত্ব যিহুদী পরম্পরা এবং অন্যান্য বাইবেলীয় গ্রন্থকারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হলো মোশির, যিনি ছিলেন ভাববাদী এবং ইস্রায়েলের উদ্ধারক, সমগ্র পেন্টাটিউকের লেখক; পুরাতন নিয়মের প্রথম পাঁচ পুস্তকের লেখক। মিশরের রাজকীয় প্রাঙ্গনে তার শিক্ষা (প্রেরিত 7:22) এবং সদাপ্রভুর (ঈশ্বরের পক্ষে হিব্রু নাম) সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ সহভাগীতা এই মুখবন্ধ স্বরূপ লেখাকে সমর্থন করে। যীশু স্বয়ং মোশির গ্রন্থস্বত্ব কে সমর্থন করেছেন (যোহন 5:45-47), যেমন অধ্যাপকেরা এবং ফারিসীরা তার দিনের করেছিলেন (মথি 19:7; 22:24)। রচনার সময় এবং স্থান আনুমাণিক 1446 থেকে 1405 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়। একটি সম্ভাবনা, এই যে, মোশি সেই বত্সর সম্ভবত এই পুস্তকটি লিখেছিলেন যখন ইস্রায়েলিযরা সীনয় প্রান্তরের মধ্যে শিবির লাগিয়েছিল। গ্রাহক মনে হয় আদি ইসরায়েলীরা শোতৃবৃন্দ হয়ে থাকবে যারা মিশরের দাসত্ব থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর তাদের যাত্রা শুরু করেছিল এবং প্রতিশ্রুত দেশ, কনানে প্রবেশের পূর্বে শেষ করেছিল। উদ্দেশ্য মোশি তাদের জাতির পারিবারিক ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে পুস্তকটি লিখেছিলেন। আদিপুস্তক রচনার মোশির উদ্দেশ্য ছিল এটা ব্যাখ্যা করতে যে কিভাবে জাতিটি এটাকে মিশরের দাসত্বের মধ্যে দেখতে পেয়েছিল (1:8), ব্যাখ্যা করতে কেন সেই দেশ “প্রতিশ্রুত দেশ” ছিল যেখানে তাদের প্রবেশ করার কথা ছিল (17:8), সমস্ত যা কিছু ঘটেছিল তার ওপরে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব দেখাতে এবং আরও দেখাতে যে মিশরে তাদের দাসত্ব কোনো দুর্ঘটনা ছিল না বরং ঈশ্বরের বৃহৎ পরিকল্পনার অঙ্গ ছিল (15:13-16, 50:20), দেখাতে যে আব্রাহামের ঈশ্বর, ইসহাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর কেবলমাত্র অনেক ঈশ্বরদের মধ্যে অন্যতম একজন ঈশ্বর ছিলেন না বরং তিনি সেই একই ঈশ্বর ছিলেন যিনি পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছিলেন (3:15-16)। ইসরায়েলের ঈশ্বর কেবলমাত্র অনেক ঈশ্বরদের মধ্যে অন্যতম একজন ঈশ্বর ছিলেন না বরং তিনি সেই ঈশ্বর ছিলেন যিনি স্বর্গ এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ সৃষ্টিকর্ত্তা ছিলেন। বিষয় প্রারম্ভ রূপরেখা 1. সৃষ্টি — 1:1-2:25 2. মানুষের পাপ — 3:1-24 3. আদমের বংশাবলী — 4:1-6:8 4. নোহের বংশাবলী — 6:9-11:32 5. আব্রাহামের ইতিহাস — 12:1-25:18 6. ইসহাকের ইতিহাস এবং তার পুত্রগণ — 25:19-36:43 7. যোষেফের বংশ — 37:1-50:26
1আকাশমন্ডল এবং পৃথ্বীর-সৃষ্টির বিবরণ। 1 আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করলেন। 2 পৃথিবী বিন্যাস বিহীন ও শূন্য ছিল এবং অন্ধকার জলরাশির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে চলাচল করছিলেন। 3 পরে ঈশ্বর বললেন, আলো হোক; তাতে আলো হল। 4 তখন ঈশ্বর আলো উত্তম দেখলেন এবং ঈশ্বর আলো ও অন্ধকার আলাদা করলেন। 5 আর ঈশ্বর আলোর নাম “দিন” ও অন্ধকারের নাম “রাত” রাখলেন। সন্ধ্যা ও সকাল হলে প্রথম দিন হল। 6 পরে ঈশ্বর বললেন, “জলের মধ্যে আকাশ (বায়ুমণ্ডল) হোক ও জলকে দুই ভাগে আলাদা করুক।” 7 ঈশ্বর এই ভাবে বায়ুমণ্ডল করে আকাশের উপরের জল থেকে নীচের জল পৃথক করলেন; তাতে সেরকম হল। 8 পরে ঈশ্বর আকাশের নাম আকাশমণ্ডল রাখলেন। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে দ্বিতীয় দিন হল। 9 পরে ঈশ্বর বললেন, “আকাশমণ্ডলের নীচে অবস্থিত সমস্ত জল এক জায়গায় জমা হোক ও স্থল প্রকাশিত হোক,” তাতে সেরকম হল। 10 তখন ঈশ্বর শুকনো জায়গার নাম ভূমি ও জলরাশির নাম সমুদ্র রাখলেন; আর ঈশ্বর দেখলেন যে, তা উত্তম। 11 পরে ঈশ্বর বললেন, “ভূমি ঘাস, বীজ উত্পন্নকারী ওষধি ও সবীজ গাছপালা তাদের জাতি অনুযায়ী ফলের উৎপাদক ফলের গাছ, ভূমির উপরে উৎপন্ন করুক,” তাতে সেরকম হল। 12 ফলে ভূমি ঘাস, তাদের জাতি অনুযায়ী বীজ উত্পন্নকারী ওষধি, ও তাদের জাতি অনুযায়ী সবীজ ফলের উৎপাদক গাছ, উৎপন্ন করল; আর ঈশ্বর দেখলেন যে, সে সকল ভালো। 13 আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে তৃতীয় দিন হল। 14 পরে ঈশ্বর বললেন, “রাত থেকে দিন কে আলাদা করার জন্য আকাশমণ্ডলের বিতানে নক্ষত্র হোক এবং তারা চিহ্নের মতো হোক, ঋতুর জন্য, রাত এবং সময়ের ও বছরের জন্য হোক; 15 এবং পৃথিবীতে আলো দেবার জন্য দীপ বলে আকাশ (বায়ুমণ্ডল) থাকুক,” তাতে সেরকম হল। 16 ঈশ্বর সময়ের উপরে কর্তৃত্ব করতে এক মহাজ্যোতি ও রাতের উপরে কর্তৃত্ব করতে তার থেকেও ছোট এক জ্যোতি, এই দুটি বড় জ্যোতি এবং সমস্ত নক্ষত্র সৃষ্টি করলেন। 17 ঈশ্বর পৃথিবীতে আলো দেবার জন্য তাদেরকে আকাশে স্থাপন করলেন এবং 18 দিন ও রাতের উপরে কর্তৃত্ব করার জন্য এবং আলো থেকে অন্ধকার আলাদা করার জন্য ঈশ্বর ঐ জ্যোতিগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন যে, সে সব উত্তম। 19 আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে চতুর্থ দিন হল। 20 পরে ঈশ্বর বললেন, “জল নানাজাতীয় জলজ প্রাণীতে প্রাণীময় হোক এবং ভূমির উপরে আকাশে পাখিরা উড়ুক।” 21 তখন ঈশ্বর বৃহৎ জলজ প্রাণীদের ও যে নানাজাতীয় জলজ প্রাণীতে জল প্রাণীময় আছে, সে সবের এবং নানাজাতীয় পাখি সৃষ্টি করলেন। পরে ঈশ্বর দেখলেন যে সে সব উত্তম। 22 আর ঈশ্বর সে সকলকে আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমরা ফলবান ও বহুবংশ হও, সমুদ্রের জল পরিপূর্ণ কর এবং পৃথিবীতে পাখিদের বৃদ্ধি হোক।” 23 আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে পঞ্চম দিন হল। 24 পরে ঈশ্বর বললেন, “ভূমি নানাজাতীয় প্রাণীতে, অর্থাৎ তাদের জাতি অনুযায়ী পশুপাল, সরীসৃপ ও বন্য পশু সৃষ্টি করুক; তাতে সেরকম হল।” 25 ফলে ঈশ্বর নিজের নিজের জাতি অনুযায়ী বন্য পশু ও নিজের নিজের জাতি অনুযায়ী পশুপাল ও নিজের নিজের জাতি অনুযায়ী যাবতীয় ভূচর সরীসৃপ সৃষ্টি করলেন; আর ঈশ্বর দেখলেন যে, সে সব উত্তম। 26 পরে ঈশ্বর বললেন, “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সঙ্গে মিল রেখে মানুষ সৃষ্টি করি; আর তারা সমুদ্রের মাছদের ওপরে, আকাশের পাখিদের ওপরে, পশুদের ওপরে, সমস্ত পৃথিবীর ওপরে ও ভূমিতে চলাচলকারী যাবতীয় সরীসৃপের ওপরে কর্তৃত্ব করুক।” 27 পরে ঈশ্বর নিজের প্রতিমূর্ত্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তাকে সৃষ্টি করলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করে তাদেরকে সৃষ্টি করলেন।28 পরে ঈশ্বর তাদেরকে আশীর্বাদ করলেন; ঈশ্বর বললেন, “তোমরা ফলবান ও বহুবংশ হও এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও কর্তৃত্ব কর, আর সমুদ্রের মাছদের ওপরে, আকাশের পাখিদের ওপরে এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর ওপরে কর্তৃত্ব কর।” 29 ঈশ্বর আরও বললেন, “দেখ, আমি সমস্ত পৃথিবীতে অবস্থিত যাবতীয় বীজৎপাদক ওষধি ও যাবতীয় সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ তোমাদেরকে দিলাম, তা তোমাদের খাদ্য হবে।” 30 আর ভূমিতে চরাচর যাবতীয় পশু ও আকাশের যাবতীয় পাখি ও ভূমিতে বুকে হেঁটে চলা যাবতীয় কীট, এই সব প্রাণীর আহারের জন্য সবুজ গাছপালা সকল দিলাম। তাতে সেরকম হল। 31 পরে ঈশ্বর নিজের তৈরী সব জিনিসের প্রতি দেখলেন, আর দেখলেন, সে সবই খুবই ভালো। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে ষষ্ঠ দিন হল।
আদিপুস্তক 2 ->
28 পরে ঈশ্বর তাদেরকে আশীর্বাদ করলেন; ঈশ্বর বললেন, “তোমরা ফলবান ও বহুবংশ হও এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও কর্তৃত্ব কর, আর সমুদ্রের মাছদের ওপরে, আকাশের পাখিদের ওপরে এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর ওপরে কর্তৃত্ব কর।” 29 ঈশ্বর আরও বললেন, “দেখ, আমি সমস্ত পৃথিবীতে অবস্থিত যাবতীয় বীজৎপাদক ওষধি ও যাবতীয় সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ তোমাদেরকে দিলাম, তা তোমাদের খাদ্য হবে।” 30 আর ভূমিতে চরাচর যাবতীয় পশু ও আকাশের যাবতীয় পাখি ও ভূমিতে বুকে হেঁটে চলা যাবতীয় কীট, এই সব প্রাণীর আহারের জন্য সবুজ গাছপালা সকল দিলাম। তাতে সেরকম হল। 31 পরে ঈশ্বর নিজের তৈরী সব জিনিসের প্রতি দেখলেন, আর দেখলেন, সে সবই খুবই ভালো। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে ষষ্ঠ দিন হল।
আদিপুস্তক 2 ->