যাত্রাপুস্তক গ্রন্থস্বত্ব পারম্পরিকভাবে মোশিকে লেখক রূপে চিহ্নিত করা হয়। এটার পিছনে দুটি বলিষ্ঠ কারণ আছে কেন মোশিকে নি:সন্দেহে এই পুস্তকটির স্বর্গীয়রূপে অনুপ্রাণিত লেখক বলে স্বীকার করা হয়। প্রথমত, যাত্রাপুস্তক নিজেই মশির লিখিত কার্যাবলীর কথা বলে। যাত্রাপুস্তকের 34:27 অধ্যায়ে ঈশ্বর মোশিকে আজ্ঞা দেন “এই বাক্যগুলো লেখো।” অন্য আর একটি অধ্যায় আমাদেরকে বলে যে ঈশ্বরের আজ্ঞা অনুসারে “মোশি প্রভুর সমুদয় বাক্যগুলো লিখেছিলেন” (24:4)। এটা অনুমান করা যুক্তিযুক্ত যে এই পদগুলো মোশির উপাদানের লেখনী যা যাত্রাপুস্তকে দেখা যায়। দ্বিতীয়ত, মোশি হয় প্রতক্ষ্য করেছিলেন অথবা যাত্রাপুস্তকের ঘটনাবলীর মধ্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যেমনটি যাত্রাপুস্তকে বর্ণিত করা হয়েছে। তিনি ফারাওদের পরিবারের মধ্যে সুশিক্ষিত হয়েছিলেন এবং রচনার জন্য যতার্থ যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। রচনার সময় এবং স্থান আনুমাণিক 1,446 - 1,405 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়। তাদের অবিশ্বস্ততার কারণে ইস্রায়েল এই দিনের পূর্ববর্তী 40 বছর ধরে প্রান্তরে ঘুরে দিন কাটিয়েছিল। পুস্তকটির রচনার এটাই বোধ হয় সব থেকে সঠিক সম্ভাব্য দিন হচ্ছে। গ্রাহক এই পুস্তকটির গ্রাহক গণ স্বয়ং নির্গমণ উদ্ধারের বংশধর হয়ে থাকবে। মোশি সীনয় সম্প্রদায়ের জন্য যাত্রাপুস্তক লিখেছিলেন, যাদেরকে তিনি মিশর থেকে বার করে নিয়ে এসেছিলেন (যাত্রাপুস্তক 17:14; 24:4; 34:27-28) উদ্দেশ্য যাত্রাপুস্তক বর্ণনামূলক আখ্যান রূপে স্থাপন করে কিভাবে ইস্রায়েল সদাপ্রভুর প্রজা রূপে পরিগণিত হয়েছিল এবং নিয়মের শর্তাবলী স্থাপন করে যার দ্বারা জাতিকে ঈশ্বরের লোক রূপে বাস করতে হত। যাত্রাপুস্তক বিশ্বস্ত, পরাক্রমী, রক্ষাকারী, পবিত্র ঈশ্বরের চরিত্রকে বর্ণন করে যিনি ইসরায়েলের সঙ্গে নিয়ম স্থাপন করেছিলেন। ঈশ্বরের চরিত্র ঈশ্বরের নাম এবং কার্য উভয়ের দ্বারা প্রকাশিত হয়, এটা দেখাতে যে আব্রাহামের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি (আদিপুস্তক 15:12-16) কিভাবে পূর্ণ হয়েছিল যখন প্রভু আব্রাহামের বংশধরদের মিশরের দাসত্ব থেকে উদ্ধার করলেন। এটা একটি একক পরিবারের কাহিনী যা মনোনীত জাতিতে পরিণত হয় (যাত্রাপুস্তক 2:24, 6:5, 12:37)। যে সংখায় হিব্রুরা মিশর থেকে বেরিয়ে এসেছিল তা অবশ্যই 2 থেকে 3 মিলিয়ন হয়ে থাকবে। বিষয় উদ্ধার রূপরেখা 1. সূত্র — 1:1-2:25 2. ইস্রায়েল থেকে ইসরায়েলের মুক্তি — 3:1-18:27 3. সীনয় পর্বতে নিয়ম দান — 19:1-24:18 4. ঈশ্বরের রাজকীয় তান্বু — 25:1-31:18 5 বিদ্রোহের কারণে ঈশ্বরের থেকে প্রত্যাহার — 32:1-34:35 6. ঈশ্বরের তাম্বুর রাজকীয় স্থাপনা — 35:1-40:38
1মিশরে ইস্রায়েলীয়দের বৃদ্ধি ও নির্যাতন ভোগ। 1 ইস্রায়েলের ছেলেরা, যাঁরা মিশর দেশে গিয়েছিলেন, পরিবারের সবাই যাকোবের সঙ্গে গিয়েছিলেন, তাঁদের নাম হল; 2 রূবেন, শিমিয়োন, লেবি ও যিহূদা, 3 ইষাখর, সবূলূন ও বিন্যামীন, 4 দান, নপ্তালি, গাদ ও আশের। 5 যাকোবের বংশ থেকে মোট সত্তর জন মানুষ ছিল; আর যোষেফ মিশরেই ছিলেন। 6 পরে যোষেফ, তাঁর ভায়েরা ও সেই দিনের র সমস্ত লোক মারা গেলেন।7 আর ইস্রায়েলের সন্তানেরা ফলবান হল, সংখ্যায় অনেক বৃদ্ধি পেল, খুব শক্তিশালী হয়ে উঠল এবং তাদের মাধ্যমে দেশ ভরে গেল। 8 পরে মিশরে এক নতুন রাজা উঠলেন, যিনি যোষেফকে চিনতেন না। 9 তিনি তাঁর প্রজাদেরকে বললেন, “দেখ, আমাদের থেকে ইস্রায়েলের সন্তানরা সংখ্যায় বেশি ও শক্তিশালী; 10 এস, আমরা তাদের সঙ্গে বুদ্ধির সঙ্গে ব্যবহার করি, নাহলে তারা বৃদ্ধি পাবে এবং যুদ্ধের দিন তারাও শত্রুদের দলে যোগ দিয়ে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং এই দেশ থেকে চলে যায়।” 11 অতএব তারা কঠিন পরিশ্রম করিয়ে তাদের কষ্ট দেবার জন্য তাদের উপরে শাসকদেরকে নিযুক্ত করল। আর তারা ফরৌণের জন্য ভান্ডারের নগর, পিথোম ও রামিষেষ তৈরী করল। 12 কিন্তু তারা তাদের মাধ্যমে যত দুঃখ পেল, ততই বৃদ্ধি পেতে ও ছড়িয়ে পড়তে লাগল; তাই ইস্রায়েল সন্তানদের জন্য তারা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল। 13 আর মিশরীয়েরা নিষ্ঠুর ভাবে ইস্রায়েল সন্তানদের দাসের মত কাজ করালো; 14 তারা কাদা তৈরির কাজে, ইট ও ক্ষেতের সমস্ত কাজে দাসের মত খাটিয়ে তাদের জীবন কষ্টকর করে তুলল। তারা তাদের দিয়ে যে সব দাসের কাজ করাতো, সে সমস্ত নিষ্ঠুর ভাবে করাতো।
15 পরে মিশরের রাজা শিফ্রা ও পূয়া নামে দুই ইব্রীয় ধাত্রীকে এই কথা বললেন, 16 “যে দিনের তোমরা ইব্রীয় স্ত্রীদের ধাত্রীর কাজ করবে ও তাদেরকে প্রসবের দিন দেখবে, যদি ছেলে হয়, তাকে হত্যা করবে; আর যদি মেয়ে হয়, তাকে জীবিত রাখবে।” 17 কিন্তু ঐ ধাত্রীরা ঈশ্বরকে ভয় করত, সুতরাং মিশরের রাজার আদেশ না মেনে ছেলে সন্তানদের জীবিত রাখত। 18 তাই মিশরের রাজা সেই ধাত্রীদের ডেকে বললেন, “এ রকম কাজ কেন করেছ? ছেলে সন্তানদের কেন জীবিত রেখেছ?” 19 ধাত্রীরা ফরৌণকে উত্তরে বলল, “ইব্রীয় স্ত্রীলোকেরা মিশরীয় স্ত্রীলোকদের মত নয়; তারা বলবতী, তাদের কাছে ধাত্রী যাবার আগেই তাদের প্রসব হয়।” 20 তাই ঈশ্বর ঐ ধাত্রীদের মঙ্গল করলেন এবং লোকেরা বৃদ্ধি পেয়ে খুব শক্তিশালী হল। 21 সেই ধাত্রীরা ঈশ্বরকে ভয় করত বলে তিনি তাদের বংশের বৃদ্ধি করলেন। 22 পরে ফরৌণ তাঁর সব প্রজাকে এই আদেশ দিলেন, “তোমরা [ইব্রীয়দের] জন্ম নেওয়া প্রত্যেক ছেলেকে নীল নদীতে ফেলে দেবে, কিন্তু প্রত্যেক মেয়েকে জীবিত রাখবে।”
যাত্রাপুস্তক 2 ->
7 আর ইস্রায়েলের সন্তানেরা ফলবান হল, সংখ্যায় অনেক বৃদ্ধি পেল, খুব শক্তিশালী হয়ে উঠল এবং তাদের মাধ্যমে দেশ ভরে গেল। 8 পরে মিশরে এক নতুন রাজা উঠলেন, যিনি যোষেফকে চিনতেন না। 9 তিনি তাঁর প্রজাদেরকে বললেন, “দেখ, আমাদের থেকে ইস্রায়েলের সন্তানরা সংখ্যায় বেশি ও শক্তিশালী; 10 এস, আমরা তাদের সঙ্গে বুদ্ধির সঙ্গে ব্যবহার করি, নাহলে তারা বৃদ্ধি পাবে এবং যুদ্ধের দিন তারাও শত্রুদের দলে যোগ দিয়ে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং এই দেশ থেকে চলে যায়।” 11 অতএব তারা কঠিন পরিশ্রম করিয়ে তাদের কষ্ট দেবার জন্য তাদের উপরে শাসকদেরকে নিযুক্ত করল। আর তারা ফরৌণের জন্য ভান্ডারের নগর, পিথোম ও রামিষেষ তৈরী করল। 12 কিন্তু তারা তাদের মাধ্যমে যত দুঃখ পেল, ততই বৃদ্ধি পেতে ও ছড়িয়ে পড়তে লাগল; তাই ইস্রায়েল সন্তানদের জন্য তারা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল। 13 আর মিশরীয়েরা নিষ্ঠুর ভাবে ইস্রায়েল সন্তানদের দাসের মত কাজ করালো; 14 তারা কাদা তৈরির কাজে, ইট ও ক্ষেতের সমস্ত কাজে দাসের মত খাটিয়ে তাদের জীবন কষ্টকর করে তুলল। তারা তাদের দিয়ে যে সব দাসের কাজ করাতো, সে সমস্ত নিষ্ঠুর ভাবে করাতো।
15 পরে মিশরের রাজা শিফ্রা ও পূয়া নামে দুই ইব্রীয় ধাত্রীকে এই কথা বললেন, 16 “যে দিনের তোমরা ইব্রীয় স্ত্রীদের ধাত্রীর কাজ করবে ও তাদেরকে প্রসবের দিন দেখবে, যদি ছেলে হয়, তাকে হত্যা করবে; আর যদি মেয়ে হয়, তাকে জীবিত রাখবে।” 17 কিন্তু ঐ ধাত্রীরা ঈশ্বরকে ভয় করত, সুতরাং মিশরের রাজার আদেশ না মেনে ছেলে সন্তানদের জীবিত রাখত। 18 তাই মিশরের রাজা সেই ধাত্রীদের ডেকে বললেন, “এ রকম কাজ কেন করেছ? ছেলে সন্তানদের কেন জীবিত রেখেছ?” 19 ধাত্রীরা ফরৌণকে উত্তরে বলল, “ইব্রীয় স্ত্রীলোকেরা মিশরীয় স্ত্রীলোকদের মত নয়; তারা বলবতী, তাদের কাছে ধাত্রী যাবার আগেই তাদের প্রসব হয়।” 20 তাই ঈশ্বর ঐ ধাত্রীদের মঙ্গল করলেন এবং লোকেরা বৃদ্ধি পেয়ে খুব শক্তিশালী হল। 21 সেই ধাত্রীরা ঈশ্বরকে ভয় করত বলে তিনি তাদের বংশের বৃদ্ধি করলেন। 22 পরে ফরৌণ তাঁর সব প্রজাকে এই আদেশ দিলেন, “তোমরা [ইব্রীয়দের] জন্ম নেওয়া প্রত্যেক ছেলেকে নীল নদীতে ফেলে দেবে, কিন্তু প্রত্যেক মেয়েকে জীবিত রাখবে।”
যাত্রাপুস্তক 2 ->